কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির জগতে চীনের স্টার্টআপ সংস্থা ‘ডিপসিক’ এক নতুন বিপ্লবের সূচনা করেছে। এই সংস্থার তৈরি নয়া এআই প্রযুক্তি শুধু বিশ্বকে হতবাকই করেনি, মার্কিন প্রযুক্তি জগতকেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। এমনকি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এই প্রযুক্তিকে মার্কিন প্রযুক্তির জন্য একটি ‘ওয়েক আপ কল’ বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এই প্রেক্ষাপটে ভারতের অবস্থান কোথায়? এআই প্রযুক্তিতে ভারতের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা চলছে।
ডিপসিকের উত্থান
২০২৩ সালে চীনের হ্যাংঝোতে প্রতিষ্ঠিত হয় ডিপসিক। মাত্র ৬ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি তারা তাদের লেটেস্ট মডেল ‘আর ওয়ান’ লঞ্চ করে। এই প্রযুক্তি মেটা এআই বা চ্যাটজিপিটির মতোই একটি অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাপ, যা যেকোনো প্রশ্নের দ্রুত ও সঠিক উত্তর দিতে সক্ষম। ডিপসিকের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর সহজ ব্যবহার এবং বিনামূল্যে সেবা প্রদান। এর ফলে অ্যাপটি আমেরিকা, ইংল্যান্ড ও চীনে অ্যাপল স্টোরে বিনামূল্যের হাইরেটেড অ্যাপের শিরোপা পেয়েছে।
ডিপসিকের সাফল্যের পেছনে রয়েছে এর উন্নত পারফরম্যান্স এবং ব্যবহারকারীদের চিন্তাভাবনার সঙ্গে সামঞ্জস্য। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই কারণেই অল্প সময়ে বিশ্বজুড়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে ডিপসিক।
মার্কিন বাজারে প্রভাব
ডিপসিকের উত্থানে মার্কিন টেক জায়ান্টদের শেয়ার মূল্যে ধস নেমেছে। NASDAQ ইনডেক্স ৩ শতাংশ পতনের পাশাপাশি নাভিডিয়া, ব্রডকম, মাইক্রোসফট ও গুগলের মতো সংস্থাগুলির শেয়ার মূল্যও নিচের দিকে নেমেছে। এমনকি ফিলাডেলফিয়া সেমিকন্ডাক্টর ইনডেক্সেও ৭.৯ শতাংশ পতন দেখা গেছে। এই পরিস্থিতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প সতর্ক করে বলেছেন, “চীনা সংস্থার তৈরি ডিপসিক এআই-এর উত্থানের পর আমাদের সংস্থাগুলির এবার ঘুম ভেঙে জেগে ওঠা উচিত।”
ভারতের অবস্থান ও চ্যালেঞ্জ
এআই প্রযুক্তিতে বিশ্বজুড়ে চীনের এই সাফল্য ভারতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ভারতেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। ২০২৪ সালের মার্চে এআই প্রযুক্তির বিকাশের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ১০,৩০০ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতকে এখনও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
এআই বিশেষজ্ঞ অরুণ চন্দ্রশেখরণ বলেছেন, “মূল পরিকাঠামোয় আরও বিনিয়োগ করা দরকার। শক্তি, কুলিং টেকনোলজি, চিপস ইত্যাদি ক্ষেত্রেও উন্নতি করতে হবে।” তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, স্মার্ট লোকদের সঙ্গে নিয়ে সঠিক পরিকাঠামো গড়ে তুললে ভারত এআই প্রযুক্তিতে দ্রুত উন্নতি করতে পারে। তবে চিপ ও হার্ডওয়্যার নির্মাণের ক্ষেত্রে আগে জোর দেওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
দেশীয় ইলেকট্রনিক্স নির্মাতা সংস্থা ইন্ডকল টেকনোলজিসের প্রতিষ্ঠাতা-সিইও আনন্দ দুবে বলেছেন, “চীনের মতো সময় ও বিনিয়োগের দিকে ফোকাস করলে ভারতও এআই প্রযুক্তিতে সাফল্য পেতে পারে।”
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
গত এক বছরে ভারতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনপ্রিয়তা লাফিয়ে বেড়েছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলিও এআই প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী দিনে ভারতও এআই প্রযুক্তিতে বিশ্বকে চমকে দিতে পারে। তবে তার জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, বিনিয়োগ এবং গবেষণা।
ডিপসিকের সাফল্য প্রমাণ করেছে যে, অল্প খরচেও এআই প্রযুক্তিতে বিপ্লব আনা সম্ভব। সিলিকন ভ্যালির উদ্যোক্তা মার্ক আন্দ্রিসেন ডিপসিককে এআই জগতের ‘যুগান্তকারী আবিষ্কার’ বলে অভিহিত করেছেন। ভারত যদি এই দৃষ্টান্ত থেকে শিক্ষা নেয় এবং সঠিক পদক্ষেপ নেয়, তাহলে এআই প্রযুক্তির জগতে ভারতও একটি শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলতে পারে।
আপাতত, ডিপসিকের উত্থান এবং ভারতের সম্ভাবনা নিয়ে গোটা বিশ্বের নজর এখন এআই প্রযুক্তির দিকে। আগামী দিনে কে এগিয়ে থাকবে, তা সময়ই বলবে।